কিভাবে ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট শাখা নিবেন?
ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং
এজেন্ট ব্যাংকিং: কোন ব্যাংক কর্তৃক নিয়োগকৃত এজেন্ট-এর মাধ্যমে প্রত্যন্ত এলাকার জনগোষ্ঠীর মাঝে সীমিত আকারে ব্যাংকিং ও আর্থিক সেবা প্রদানই এজেন্ট ব্যাংকিং। এজেন্ট হচ্ছেন একটি আউটলেট বা কেন্দ্রের মালিক যিনি চুক্তির আওতায় কোন ব্যাংকের পক্ষে উক্ত আউটলেটে ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে থাকেন।
এজেন্ট ব্যাংকিং-এর উদ্দেশ্য:
১. দেশের প্রত্যন্ত এলাকার বিপুল জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় এনে তাদেরকে অর্থনীতির মূলধারায় সংযুক্তকরণ।
২. ক্ষুদ্র সঞ্চয় সৃষ্টির মাধ্যমে প্রান্তিক ও সীমিত আয়ের জনগোষ্ঠীর পুঁজি গঠনে সহায়তা করা।
৩. ফরেন রেমিটেন্সের অর্থ দ্রুত ও সহজে প্রাপকের নিকট পৌঁছানো।
৪. প্রত্যন্ত এলাকার জনগোষ্ঠীর দেশব্যাপী লেনদেন প্রবাহকে সহজতর করা।
৫. সুবিধা ও পুঁজি বঞ্চিতদের অর্থায়নের মাধ্যমে তাদের আয় ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখা।
৬. পল্লীর অবহেলিত কৃষি ও অকৃষি খাতে অর্থায়নের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করা।
এজেন্ট ব্যাংকিং-এ গ্রাহক সেবা:
১. সব ধরণের ব্যাংক হিসাব খোলা
২. নগদ জমা, উত্তোলন ও ফান্ড ট্রান্সফার
৩. বৈদেশিক রেমিট্যান্স-এর অর্থ প্রদান
৪. হিসাবের ব্যালান্স অনুসন্ধান ও হিসাব বিবরণী প্রদান
৫. অ্যাকাউন্ট-এর বিপরীতে চেকবই ও ডেবিট কার্ড প্রদান
৬. ক্লিয়ারিং চেক গ্রহণ ৭. চঙঝ এর মাধ্যমে টাকা উত্তোলন
৮. বিনিয়োগ বিতরণ ও বিতরণকৃত বিনিয়োগের কিস্তি আদায়
৯. ইউটিলিটি (গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ) বিল গ্রহণ
১০. এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত যেকোন গ্রাহকসেবা
এজেন্ট হতে পারবেন যারা:
১. সমাজ কল্যাণ অধিদপ্তরে নিবন্ধিত এনজিও;
২. মাইক্রো-ক্রেডিট রেগুলেটরী অথরিটির আওতায় নিবন্ধিত ক্ষুদ্রবিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান;
৩. সোসাইটিজ রেজিষ্ট্রেশন অ্যাক্ট, ১৮৬০ এর অধীনে নিবন্ধিত সমিতি;
৪. সমবায় সমিতি এ্যাক্ট ২০০১ এর আওতায় গঠিত সমবায় সমিতি;
৫. কোম্পানিজ এ্যাক্ট ১৯৯৪ এর অধীনে গঠিত ও নিবন্ধিত কোম্পানি;
৬. উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ইস্যুকৃত ট্রেড লাইসেন্সধারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান;
৭. শাখা/ইউনিট আছে এমন সরকারি দপ্তর/কার্যালয়;
৮. স্থানীয় সরকারের শহর ও পল্লী অঞ্চলের কার্যালয় এবং ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্র;
৯. এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সুপারিশকৃত বা অনুমোদিত যে কোন প্রতিষ্ঠান।
এজেন্ট হওয়ার অনুপযুক্ত যারা:
১. ফৌজদারী অপরাধের অভিযোগে মামলায় তদন্তাধীন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান;
২. মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে অর্থায়ণের দায়ে অভিযুক্ত বা তদন্তাধীন কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান;
৩. আদালত কর্তৃক দন্ডপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তি, সাজা সমাপ্তির পর থেকে ০৩ (তিন) বছর পর্যন্ত;
৪. যে কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ খেলাপি;
৫. আদালত কর্তৃক দেউলিয়া ঘোষিত কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান;
৬. ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১-এর ২৬ (গ) ধারা অনুযায়ী ব্যাংক সংশ্লিষ্ট কোন ব্যক্তি;
৭. ব্যাংক কর্মকর্তাগণ অবসরগ্রহণ বা পদত্যাগের পরবর্তী এক বছর একই ব্যাংকের জন্য;
৮. অন্য ব্যাংকের বিদ্যমান এজেন্ট।
এজেন্ট যা করতে পারবেন না:
১. একই সাথে একাধিক ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা।
২. এজেন্ট ব্যাংকিং কেন্দ্রেঅনুমোদিত ব্যাংকিং কার্যক্রমের পাশাপাশি অন্য কোন ব্যবসা/কার্যক্রম পরিচালনা।
৩. গ্রাহকদের হিসাব খোলার অথবা বিনিয়োগের অনুমোদন দেয়া।
৪. ব্যাংকের যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোন তৃতীয় পক্ষের কাছে ব্যাংকের প্রতিনিধিত্ব করা।
৫. সিস্টেম অকার্যকর থাকা অবস্থায় অথবা স্বয়ংক্রিয় রশিদ প্রদান ব্যতিরেকে কোন ধরণের লেনদেন।
৬. ব্যাংকিং সিস্টেমের বাহিরে/সমান্তরালে গ্রাহদের সাথে আলাদাভাবে লেনদেন।
৭. চেকের মাধ্যমে লেনদেন।
৮. বিদেশী মূদ্রার লেনদেন/কেনাবেচা ।
৯. গ্রাহকের পক্ষে ব্যাংক গ্যারান্টি ইস্যু ।
১০. কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া কেন্দ্রের বাহিরে অন্যত্র অফিস/বুথ/ সাইনবোর্ড স্থাপন করে ব্যাংকিং পরিচালনা বা সাব-এজেন্ট নিয়োগ।
১১. কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া কেন্দ্রের স্থান পরিবর্তন।
১২. বিভিন্ন সেবার বিপরীতে ব্যাংক নির্ধারিত চার্জের বেশী আদায়।
যে কারণে এজেন্ট চুক্তি বাতিল হবে:
১. এজেন্ট হিসেবে অনুপযুক্ততার কোন কারণ ঘটলে অথবা এজেন্ট হওয়ার অনুপযুক্ত কোন ব্যাক্তির কাছে আংশিক মালিকানা হস্তান্তর করলে; ২. এজেন্টের ব্যবসায়িক কর্মকান্ড বন্ধ হওয়া ঃ স্বেচ্ছায় অথবা আদালত বা নিয়ন্ত্রক সংস্থা কর্তৃক নিষেধাজ্ঞার কারণে;
৩. এজেন্ট বড় ধরনের ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্মুখীন হলে এবং পরবর্তী ০৩ (তিন) মাসের মধ্যে ক্ষতি কাটিয়ে এজেন্সি কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চালাতে অপারগ হলে;
৪. ব্যাংকের পূর্বানুমতি ব্যতিত এজেন্ট মালিকানা হস্তান্তর বা কেন্দ্রের ঠিকানা পরিবর্তন করলে কিংবা কেন্দ্র বন্ধ রাখলে;
৫. এজেন্ট তার বৈধ ব্যবসায়িক অনুমতিপত্র বা ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করতে ব্যর্থ হলে;
৬. বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইডলাইনের কোন ধারা বা শর্ত অমান্য করলে;
৭. ব্যাংকের কাছে ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মিথ্যা বা ভুল তথ্য সরবরাহ করলে।
এজেন্ট হওয়ার নিয়মাবলী:
১. নির্দিষ্ট আবেদনপত্র পূরণ করে নিকটস্থ শাখায় জমা দিতে হবে।
২. শাখা প্রধান আবেদনপত্র যাচাই করে জোনাল অফিসের মাধ্যমে প্রধান কার্যালয়ে পাঠাবেন
দরখাস্তের সাথে যেসকল কাগজপত্র সংযুক্ত করতে হইবে:
১. প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স/রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটের সত্যায়িত ফটোকপি
২. প্রতিষ্ঠানের গঠনতন্ত্র/মেমোর্যান্ডাম অব আর্টিকেল এন্ড এসোসিয়েশন/রেজিস্ট্রিকৃত অংশিদারী চুক্তিনামা-এর কপি
(প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
৩. সর্বশেষ অডিটকৃত আর্থিক প্রতিবেদন ও পরিচিতিমূলক কাগজপত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
৪. ‘এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবসা পরিচালনা ও স্বাক্ষরকারী মনোনয়ন’ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষীয় সিদ্ধান্তের কপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।
৫. VAT রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটের সত্যায়িত কপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
৬. TIN সার্টিফিকেটের সত্যায়িত কপি
৭. হিসাব বিবরণীসহ আর্থিক স্বচ্ছলতার ব্যাংক (Bank Solvency) সার্টিফিকেট
৮. আবেদনকারী (গণ)-এর জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত কপি
৯. আবেদনকারী (গণ)-এর পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট।
১০. আবেদনকারী (গণ)-এর CIB রিপোর্ট
১১. আবেদনকারী (গণ) কে নূন্যতম ০৩ (তিন) বছর যাবৎ চিনেন এবং তার সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে পারবেন স্থানীয় এমন ০২ (দুই) জন গণ্যমান্য ব্যক্তির/জনপ্রতিনিধির লিখিত সুপারিশ।
১২. আবেদনকারী (গণ)-এর ০২ (দুই) কপি পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত ছবি
১৩. আবেদনকারীর সর্বশেষ শিক্ষাসনদের সত্যায়িত কপি
১৪. ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখা প্রধান/ব্যবস্থাপকের যাচাই/মূল্যায়ন প্রতিবেদন
১৫. শাখা প্রধান কর্তৃক পূরণ ও স্বাক্ষরকৃত “Checklist for approval of new Agent”
১৬. ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট জোন প্রধানের মতামতসহ ফরওয়ার্ডিং লেটার।
* বিস্তারিত তথ্য জানতে নিকটস্থ শাখায় যোগাযোগ করুন।
কোন মন্তব্য নেই